(অধিকাংশ দলীয় নেতা কর্মী, হাজী মোঃ আবু আকতার কে বোয়ালখালী পৌরসভা বিএনপির সদস্যসচিব হিসেবে দেখতে চাই)
শুক্রবারের সাপ্তাহিক সাক্ষাতকারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ আবু আকতার এর সাক্ষাতকার নিচ্ছেন সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মাদ ইউনুস (ইনু)
দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ: গণতন্ত্রপন্থি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিএনপি ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রণয়ন করে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে সংস্কার
হাজী মোঃ আবু আকতার: শেখ হাসিনার পরবর্তী যে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ, এখানে অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। বাস্তবতা হচ্ছে-সর্বপ্রথম আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন সংস্কারের জন্য সুনির্দিষ্ট রূপকল্প দিয়েছিলেন, তখন কেউ জানত না কখন শেখ হাসিনার পতন ঘটবে, কখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। সেই সময় ফ্যাসিবাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারেক রহমান ৩১ দফা প্রণয়ন করেছিলেন। কারণ, তার বিশ্বাস ছিল ১৬ বছরে যে গুম-খুন-হামলা-মামলার বিপরীতে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য বড় রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছে, এই ত্যাগ-সংগ্রাম অবশ্যই বৃথা যাবে না।
দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ: রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে বিএনপি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?
হাজী মোঃ আবু আকতার: রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভারসাম্য বলতে এখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য বিষয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রিসভার ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইনসভা বা পার্লামেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা আছে। এবং সুনির্দিষ্টভাবে একটি রাষ্ট্রে আমরা দেখি বিচার বিভাগ রয়েছে, আইনসভা রয়েছে, নির্বাহী বিভাগ রয়েছে-এ তিনটা অর্গানের ভেতরেও কিন্তু একটা ব্যালেন্স অব পাওয়ার থাকা উচিত। সেটা কীভাবে করব, ডিটেইল মেকানিজম কী হবে, আমাদের ৩১ দফায় আছে।
দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ: অধিকাংশ মৌলিক সংস্কারের প্রধান প্রস্তাবক যদি বিএনপি হয়, তবে কেন একটি ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে বিএনপি সংস্কার চায় না?
হাজী মোঃ আবু আকতার: দেখুন, যে রাজনৈতিক দল সবার আগে বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। ২০১৬ সালে ভিশন-২০৩০ দিয়েছি, ২০২২ সালে ২৭ দফা দিয়েছি, ২০২৩ সালে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে ৩১ দফা দিয়েছি। এর মাধ্যমে কিন্তু সংস্কারের একটা পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। তখন কিন্তু ফ্যাসিবাদ ছিল, তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দিয়েছে। আজকে যদি ফ্যাসিবাদ পরিবর্তনের পরে এমন একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেউ প্রশ্ন করেন বিএনপি সংস্কারের কথা বলছে না। তাহলে এটা কি অজ্ঞতা, নাকি অপপ্রচার, নাকি কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ: সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কি?
হাজী মোঃ আবু আকতার: সংস্কার এবং নির্বাচনকে যদি মুখোমুখি তৈরি করা হয়, সেটা একটা অনভিপ্রেত বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা মনে করি সংস্কার কেতাবি কোনো বিষয় নয়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার মানে খুব সুন্দর করে সংবিধানে কিছু লিখে দিলাম, সেটা না। সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য হবে জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করা, জনগণের অধিকার এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আমরা শুধু এতটুকুই বলব, রাষ্ট্রের মৌলিক যে কাঠামোগত সংস্কার এগুলো করার জন্য একটা নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। জনগণের ম্যান্ডেটের প্রয়োজন। একটি অনির্বাচিত সরকার কখনোই জনগণের আকাঙ্ক্ষার বা জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে না।
দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ: গণভোট ও গণপরিষদ নির্বাচনের বিরোধিতা বিএনপি কেন করছে?
হাজী মোঃ আবু আকতার: ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত একটিবারের জন্যও কেউ গণভোট ও গণপরিষদের কথা বলেননি। আমরা জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, বাংলাদেশে একটা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী রয়েছেন, যারা গণভোট ও গণপরিষদ কি সে সম্পর্কে কোনো ধারণাও রাখেন না। এগুলো ৫ আগস্টের অনেক পরে বলা, ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার বিভিন্ন টুলস হিসাবে সামনে এসেছে। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এগুলো কোনোটাই ছিল না।
দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ: আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কি?
হাজী মোঃ আবু আকতার: ফ্যাসিবাদের ১৬ বছরে এবং গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি শহিদ-পঙ্গু-আহতের রাজনৈতিক দল হিসাবে, সবচেয়ে বেশি গুম-খুন, হামলা-মামলার শিকার দল হিসাবে, জনগণের আকাঙ্ক্ষার ধারক হিসাবে বিএনপি বারবার বলে এসেছে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের এবং ব্যক্তিগতভাবে তার নেতৃত্বের অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হতে হবে।
দৈনিক চট্টগ্রাম সংবাদ: দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঘোষণা হয়েছে। কমিটিতে নব নির্বাচিত সদস্য আপনার অভিমত কি?
হাজী মোঃ আবু আকতার: নবগঠিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতা, দলের দুঃসময়ে নির্যাতিত নেতারা স্থান পেয়েছে। তাই দক্ষিণ জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটিকে সাধুবাদ জানায়। দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে কাজ করবে বলে আশা রাখি।